ইদানিং স্টেবল ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য পকেট রাউটারের ব্যবহার বেশ জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। ধরুন আপনি গ্রামে গিয়েছেন যেখানে আপনার সিম অপারেটরের নেটওয়ার্ক দূর্বল। তাহলে আপনার পকেট রাউটার ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই। আজকে আমরা গ্রামীণফোনের সেরা দুই পকেট রাউটার নিয়ে কথা বলব - একটা হলো GP Pocket Router 4G এবং অন্যটি GP Wingle Pocket Router।
দুইটিই সেরা, কিন্তু কোনটি আপনার চাহিদা পরিপূর্ণভাবে মেটাবে? অনুরোধ থাকবে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার, পকেট রাউটার নিয়ে ধারণা একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আবার GP Pocket Router price in Bangladesh ও জানতে পারবেন। ঘাবড়াবেন না, দাম আপনার সাধ্যের মধ্যেই আছে।
সবার আগেই এই দুইটি পকেট রাউটারের মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য বলে দিই। GP Pocket Router 4G-তে 3000mAh এর একটি বড়সড় ব্যাটারি আছে, যা GP Wingle-এ নেই।
GP Wingle চাইলে আপনি গাড়ির যে USB Type কার্ড চার্জিংটি রয়েছে সেটার সাথে এটাচ করে ব্যবহার করতে পারেন, আবার পাওয়ার ব্যাংকের সাথেও ব্যবহার করতে পারছেন। চাইলে যেকোন USB-A বা USB-C এর সাথে ব্যবহার করতে পারেন।
 |
Photo Credit: Samzone |
তাই এখানে কোন ব্যাটারি শর্টেজের সমস্যা থাকছে না, আনলিমিটেড ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে GP Wingle রাউটারটির সাথে একটি সাপোর্টিভ পোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে। যেমন আপনার গাড়ি নেই; বা USB পোর্টে কানেক্ট করে রাউটার ব্যবহারে ভালো লাগছে না, তাহলে আপনার জন্য এটা না।
GP Pocket Router এ ব্যাটারির পাশেই একটা সিম কার্ড স্লট আছে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন কোন ডেডিকেটেড সিম কার্ড এর সাথে দেওয়া হচ্ছে কিনা- উত্তর হলো না। আপনাকে আলাদাভাবে একটা GP 4G সিম নিতে হচ্ছে। যেভাবে NID দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নেন সেভাবে।
 |
Photo Credit: Samzone |
তারপর My GP অ্যাপ থেকে আপনার পছন্দের প্যাকেজ কিনে নিতে পারছেন। আমি রিকমেন্ড করব এক মাস মেয়াদি প্যাকেজগুলো নিতে।
সাধারণত পকেট রাউটারের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক কোয়ালিটি তেমন ভালো হয় না। তবে GP Pocket Router এর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক কোয়ালিটি মোটামুটি ভালো দেখা গিয়েছে, তেমন একটা স্ক্র্যাচ পড়ে নি।
এই রাউটারে একটা OLED Display আছে। যেখান থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু আপনারা দেখতে পারবেন। এমনকি QR code স্ক্যান করে কানেক্ট করতে পারবেন যেকোন ডিভাইস। তবে ডিসপ্লেটা টাচস্ক্রিন নয়।
 |
Photo Credit: Samzone |
তাছাড়া এখান থেকে আপনারা ব্যাটারি লেভেল, কত জিবি remaining আছে, কানেকশন স্পিড কত ইত্যাদি দেখতে পারবেন। আবার আরেকটা QR code আছে, ঐটা স্ক্যান করে আপনারা সরাসরি জিপির ওয়েবসাইটে গিয়ে একসেস নিয়ে সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারবেন।
এই ছোটখাটো পকেট রাউটারটির আকর্ষণীয় দিক হলো এর পরিবহন সুবিধা। আপনি পকেটে, ব্যাগের ব্যাকপেকে করে নিতে পারবেন। জিপির ক্লেইম অনুযায়ী 100 মিটারের মধ্যে এর কানেক্টিভিটি পাবেন। At a time, আপনি এই রাউটারটির সাথে 32 টি ডিভাইসকে কানেক্ট করাতে পারবেন এবং এর লেটেস্ট WiFi 6 টেকনোলজি আছে।
আগেই বলেছিলাম এখানে 3000mAh এর ব্যাটারি আছে। তাই ফুল চার্জ করতে ভালো সময় নেয়। কোম্পানির দাবি অনুযায়ী, আপনি GP Pocket Router থেকে আট ঘন্টার মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। তবে এখানে কথা আছে।
একসাথে কতটি ডিভাইস এর সাথে কানেক্টেড আছে সেটার ওপর এই রাউটারের ব্যাটারি ব্যাকআপ নির্ভর করে। আবার আপনি হয়তো গাড়িতে চলন্ত অবস্থায় আছেন, সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক উঠানামা করবে স্বাভাবিক। তখন একটু ফাস্ট ব্যাটারি খরচ হবে। আবার আপনি কোন জায়গায় আছেন সেখানকার নেটওয়ার্ক স্ট্যাবিলিটি কেমন তার ওপরও নির্ভর করছে ব্যাটারি ব্যাকআপ।
তবে সবমিলিয়ে, সব সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় আপনি GP Pocket Router থেকে 5-6.5 ঘন্টার মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে পারেন। আবার এধরনের স্ট্রাগলিং অবস্থায় রাউটারটা কিছুটা গরমও হয়।
সো, অনেক সময় আমাদের এসব পোর্টেবল রাউটারের প্রয়োজন পড়ে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে টিনের ঘরে, যেখানে স্বাভাবিক নেটওয়ার্ক পেতেই সমস্যা হয় সেখানেতো ইন্টারনেট চালানো আরো মুশকিল। তখন এ ধরনের পকেট রাউটারের বিকল্প থাকে না। হয়তো রাউটারটিকে জানালার পাশে রেখে দিয়েছেন অর্থাৎ মোটামুটি নেটওয়ার্ক থাকে এমন জায়গায়। আর এদিকে ইন্টারনেট চালাতেও সমস্যা হচ্ছে না।
আবার বন্ধুদের সাথে হয়তো ঘুরতে যাচ্ছেন, মাউন্টেনিং করতে যাচ্ছেন; ইত্যাদি সময় এধরনের পকেট রাউটারের বেশ প্রয়োজন পড়ে। আচ্ছা এই ফাঁকে এবার এর দামটা বলে নিই। GP 4G Pocket Router এর দাম 3899 টাকা। সময়ের সাথে সাথে দামের কম বেশি হতে পারে। আপনারা লেটেস্ট প্রাইসটা ব্রাউজ করে দেখে নিবেন। আবার 2 বছরের ওয়ারেন্টিও কিন্তু সাথে পাচ্ছেন।
তবে গ্রামীণফোন যদি এর প্রাইসটাকে তিন হাজারের মধ্যেই বেঁধে ফেলতে পারত তাহলে বেস্ট হতো।
এবার আসি GP Wingle এর বেলায়। এটা হলো আমাদের একসময় বহুল ব্যবহার করা মডেমের মতো। আপনারা প্রথম ছবিতেই দেখেছেন। মডেমের মতোই ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করে ব্যবহার করতে পারবেন। প্লাস্টিক কোয়ালিটি ভালো আছে, আবার ডিউরেবিলিটিও ভালো মনে হয়েছে।
 |
Photo Credit: Samzone |
গ্রামীণফোনের ব্র্যান্ডিং আছে ওপরে। এটাতেও কিন্তু লেটেস্ট WiFi 6 সাপোর্টেড। তবে এখানে আপনি একই সাথে 16টি পর্যন্ত ডিভাইস কানেক্ট করতে পারবেন যেখানে GP Pocket Router এ 32টি ডিভাইস কানেক্ট করাতে পেরেছিলেন। আবার GP Wingle এর কানেক্টিভিটিও GP Pocket Router এর চেয়ে কম। এখানে 50 মিটার পর্যন্ত এরিয়ায় কানেক্টিভিটি পাচ্ছেন যেখানে GP Pocket Router এ 100 মিটার ছিল।
মূলত এই মডেমের মতো রাউটারটি গ্রামীণফোন তৈরি করেছে গাড়ির জন্য। যেখানে আপনি এটি পোর্টে লাগিয়ে দিলেন, আর এর মাধ্যমে গাড়ির টিভি প্লেয়ারটা সহ আরো যারা আছে সবাই একটা স্ট্যাবল কানেক্টিভিটি পেল।
 |
Photo Credit: Samzone |
যেহেতু এই GP Wingle রাউটারে কোন ডিসপ্লে নেই, তাই আপনার My GP অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে সবকিছু দেখতে। গ্রামীণফোন এই রাউটারের ক্ষেত্রেও 2 বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে।
এখন এটার ব্যাটারি না থাকলেও চমক আছে। ধরুন আপনার গাড়ি নেই বা থাকলেও গাড়িতে এটা ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না। আপনি চাইলে এটিকে একটি পাওয়ার ব্যাংকের সাথে যুক্ত করতে পারেন। এরপর আপনি আনলিমিটেড ইউজ করতে পারবেন। কারণ আপনার পাওয়ার ব্যাংক নিশ্চয়ই 5000 বা 10000mAh এর।
 |
Photo Credit: Samzone |
এভাবে ব্যবহার করলে প্রথমটা থেকেও বেশি ব্যাকআপ পেতে যাচ্ছেন। এবার দামের ব্যাপারে আসি, GP Wingle রাউটারের দাম 2499 টাকা। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা তো আছে, যেমন এর রেঞ্জ 50 মিটার। যা একটু কম মনে হয়েছে আমার কাছে। আবার একসাথে 16 টি ডিভাইস কানেক্ট করা যাচ্ছে যেখানে GP Pocket Router এ 32টি কানেক্ট করতে পারছেন। তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য হলে দুইটাই একদম পারফেক্টই আছে।