ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমার কারণ- দোষ আপনার থাকতে পারে

আজকাল আমাদের অধিকাংশের বাসায় ফ্রিজ আছে। আবার ফ্রিজ নিয়ে সমস্যারও শেষ নেই। ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমা এই সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আপনি কি জানেন এর জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনি দায়ী। চলুন আজকে এক এক করে ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমার সব কারণ জানব। তাই অনুরোধ করছি, ছোট্ট একটি আর্টিকেল এবং আপনার সমস্যার সমাধান পেতে চাইলে সম্পূর্ণটা পড়বেন।

তবে একটা ভালো ফ্রিজ কেনা মানে শুরুতেই অধিকাংশ সমস্যা থেকে মুক্তি। প্রথমে কারণগুলো সংক্ষেপে দিয়ে দিই আপনার সুবিধার্থে তারপর সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনায় যাব। ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমার ৬টি কারণ-

  1. ফ্রিজের দরজার রাবার কোটিংয়ে সমস্যা
  2. অতিরিক্ত খাবার
  3. টেম্পারেচার সেটিংস
  4. থার্মোস্ট্যাটে সমস্যা
  5. ড্রেইন পাইপ ব্লক
  6. ঘন ঘন ফ্রিজ খোলা
ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমার কারণ

দরজার সমস্যা 

ফ্রিজে বরফ জমার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে কারণটা হতে পারে তা হলো ফ্রিজের দরজা ভালোভাবে লাগছে না। আপনি হয়তো ভালোভাবে বন্ধ করছেন, কিন্তু কোন না কোনভাবে দরজার মাঝে ফাঁকা জায়গা থেকে যাচ্ছে।
Image Credit: Afr Technology
এর কারণ হলো দরজার চারপাশে রাবারের একটা আবরণ থাকে, যেমনটা উপরের ছবিতে দেখছেন। ফ্রিজ বেশি পুরনো হয়ে গেলে এটি হয়তো ছিড়ে যায়, বা মাঝখানে ছিদ্র হয়ে যায়। যার কারণে বাইরের আদ্র বাতাস ঐ ফাকা জায়গা দিয়ে ফ্রিজে ঢুকে অতিরিক্ত বরফ জমায়।

তাহলে প্রথমে আপনাকে দেখতে হবে ঐ ধরনের কোন সমস্যা আপনার ফ্রিজে আছে কিনা। থাকলে সেটা ঠিক করে নিবেন। এই সমস্যাটা থাকলে ফ্রিজ ডিপ বা নরমাল যেটাই হোক বরফ জমবেই।

২. অতিরিক্ত খাবার

অনেকেই মনে করতে পারেন যে ফ্রিজ তো কিনেছিই খাবার রাখার জন্য। এখানে আবার অতিরিক্ত খাবার রাখলে সমস্যা কি। হ্যা, অস্বাভাবিক বরফ জমার অন্যতম কারণ হলো ফ্রিজে অতিরিক্ত খাবার রাখা। এর কারণ হলো, যখন আপনি এভাবে ফ্রিজটা ঠাসিয়ে ফেলবেন তখন ফ্রিজের পেছনের এয়ার ভেন্টিলেটর ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না।
ফ্রিজের এয়ার ভেন্টিলেশন
Image Credit: Afr Technology
অর্থাৎ ফ্রিজের যে স্বাভাবিক এয়ার ভেন্টিলেশন অর্থাৎ বাতাস চলাচলের পথ সেটা বাধাগ্রস্ত হয়ে অতিরিক্ত বরফ জমায়। অনেক সময় দেখা যায় ফ্রিজের একটা নির্দিষ্ট অংশে অস্বাভাবিক বরফ জমে আছে। তাই একটু হিসেবি হয়ে খাবার রাখুন, ফ্রিজ যেন তার স্বাভাবিক কাজকর্মের সুযোগ পায়।

৩. টেম্পারেচার সেটিংস

হয়তো অনেকেই জানেন আবার জানেন না, ফ্রিজের ভেতর দেখবেন একটা রেগুলেটরের মতো আছে। যেটাকে ঘুরিয়ে তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানো যায়। এটাকে বলা হয় থার্মোস্ট্যাট। এটা যদি আপনি সঠিকভাবে সেট না করতে পারেন তাহলে বরফ জমবে, অর্থাৎ যদি অনেক বেশি দিয়ে রাখেন আর কি। তাহলে প্রশ্ন হলো, থার্মোস্ট্যাট কততে রাখবেন?

Image Credit: Afr Technology
আপনি ১,২, বা ৩ এ এটি সেট করে রাখবেন । তাহলে বরফ জমবে না। আবার কিছু খাবারের ক্ষেত্রে বরফ জমানোর প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে এটিকে প্রয়োজনমতো বাড়াবেন। তবে এটা সবসময় ব্যবহারের জন্য না। সবসময় যদি ৬ বা ৭ দিয়ে রাখেন তাহলে তো বরফ জমবেই।

৪. থার্মোস্ট্যাটে সমস্যা

ওকে, থার্মোস্ট্যাট কি সেটা বলেছি। এখন এর সমস্যা হলেও কিন্তু বরফ জমতে পারে। ধরুন, থার্মোস্ট্যাট নষ্ট। এটা নষ্ট মানেই আপনার ফ্রিজের আর তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ নেই। তখন ফ্রিজের কম্প্রেসার ফুল স্পিডে চলতে শুরু করে। যার ফলে অনিয়ন্ত্রিত বরফ জমে। তাহলে আপনাকে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে থার্মোস্ট্যাট ঠিক আছে কিনা। না থাকলে মেরামত করে নিতে হবে।

৫. ড্রেইন পাইপ ব্লক

প্রত্যেকটা ফ্রিজেই আপনি দেখবেন একটা ড্রেইন থাকে পানি বের হওয়ার জন্য। নিয়মিত এই পানি ফেলে দিতে হয়। পাত্রের মতো এই ড্রেইনটা সাধারণত কম্প্রেসারের খানিকটা উপরে থাকে। 

Image Credit: Afr Technology
ধরেন পানি জমতে জমতে ফুল হয়ে গিয়েছে অথচ আপনি ফেলে দেন নি। তাহলে পানি আর বের হওয়ার পথ না পেয়ে বরফ জমে যাবে। তাই, রেগুলার চেক করেন পানি জমা হয়ে আছে কিনা ড্রেনে এবং সাথে এটাও দেখবেন যে পাইপটা দিয়ে পানি আসে অর্থাৎ ড্রেইন পাইপ সেটা কোন কারণে ব্লক হয়ে আছে কিনা।

৬. ঘন ঘন ফ্রিজ খোলা 

আমার মনে হয় বাঙালি ফ্রিজ ব্যবহারকারীদের এই অভ্যাসটা থামানো যাবে না। আমরা অনেকেই আছি যারা পুরো দিনে দূরে থাক; এক ঘন্টা ভিতরই কয়েকবার ফ্রিজ খুলি। হয়তো গরমে বাইরে থেকে এসেছি, তাই ফ্রিজের দরজাটা খুলে এর ভেতর থেকে অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা হাওয়া নিচ্ছি। আবার অপ্রয়োজনে অনেকবার ফ্রিজ খুলি। এতে করে বাইরের উষ্ণ, আদ্র বাতাস ভিতরে গিয়ে বরফ জমায়।

আশা করি ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমার কারণ জানতে পেরেছেন। উপরে যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে এসবের প্রতি সতর্ক থাকবেন। কারণ ফ্রিজ যেহেতু দামি, তাই একটা ফ্রিজ অনেক টাকা দিয়ে কিনে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার করতে না পারলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। আর এর বাইরেও ফ্রিজের টেকনিক্যাল কোন সমস্যা হলে তো অবশ্যই মেকানিক দিয়ে সার্ভিসিং করতে হবে। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো নিচে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইল।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url