গরমের জন্য ৪টি সেরা চার্জার ফ্যান; চার্জার ফ্যানের দাম ২০২৫

আমরা নিশ্চয়ই এপ্রিল-মে মাসের গরমে অতিষ্ঠ। মনে হয় গোসলের সময় পানিতে আস্ত বরফ দিয়ে পানি গুলো গায়ে দিই। কিন্তু গোসল তো মিনিট দশেক। পুরো সময়টাইতো আমাদের ফ্যানের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়। ওহ! আবার এখানেও ঝামেলা আছে। গরমে কোন এক অদ্ভুত কারণে লোড শেডিং মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়।

এবার আমাদের মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাস চলে যায় চার্জার ফ্যানের ওপর। হ্যা, আজকের এই আর্টিকেল অনেক বিচার বিশ্লেষণের পর সেরা পাঁচ চার্জার ফ্যানের ওপর। যা গরমে আপনাকে দিবে প্রশান্তি আর এসব সেরা রিচার্জেবল ফ্যান থেকে ব্যাকআপ পাবেন প্রায় অর্ধ দিনের মতো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক এবং একই সাথে চার্জার ফ্যানের দাম ২০২৫ ও জেনে নেয়া যাক।

সেরা চার্জার ফ্যান ২০২৫; চার্জার ফ্যানের দাম

১. XUNDD চার্জার ফ্যান

Photo Credit: Samzone

এই ফ্যানটার নামটা একটু অদ্ভুত ধরনের। তবে একে বলা হচ্ছে মাল্টি ফাংশনাল ক্লিপ ফ্যান। অর্থাৎ যেকোন জায়গায় এটাকে ক্লিপ করে মাউন্ট করতে পারবেন। এর নিচের অংশটা ক্লিপার হিসেবে কাজ করে।

তবে আপনি চাইলে ফ্যানের হেডটাও যেকোন দিকে ঘুরাতে পারবেন। আবার উপর থেকে যদি ক্লিপ করে দেন তাহলে এটিকে সিলিং ফ্যানের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন।

Photo Credit: Samzone

তবে এই ফ্যানের আরেকটা সুবিধা হচ্ছে এর ভেতর লাইট আছে। অনেক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের লাইট, ফ্যান দুইটারই একসাথে প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ফ্যানটা বেশ সুবিধা দেয়।

আবার এর মটরটা হলো ব্রাশলেস মটর, রেগুলার মটর না। ব্রাশলেস মটর হওয়ায় এটি নয়েজও খুব কম করে আবার এধরনের মটরগুলো লং লাস্টিং করে। ফলে আপনি দীর্ঘদিন এই ফ্যান গুলো ব্যবহার করতে পারবেন। আবার এর স্ট্যান্ডও বা হাইটও এডজাস্ট করা যায়।

ওহ! এখানে 6000mAh এর ব্যাটারি থাকায় আপনি লো-মুডে চালালে প্রায় 6 ঘন্টার মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। আবার লাইট, ফ্যান সব হাইস্পিডে চালালে তিন বা সাড়ে তিন ঘন্টার মতো ব্যাকআপ পাবেন। ফ্যানটাকে চার্জ দেওয়ার জন্য USB Type - C পোর্ট আছে যেটা দিয়ে প্রায় তিন ঘন্টায় ফুল চার্জ করা যায়।

এবার আসি দামের বেলায়। চার্জার ফ্যানের দাম ২০২৫ অনুযায়ী এই ফ্যানটার মডেল নেম হচ্ছে XUNDD XDOT-063। এর দাম ২৬৫০ টাকা।

চলুন এবার কথা বলি এই গরমে সেরা চার্জার ফ্যানের তালিকায় বাংলাদেশে মোস্ট পপুলার এবং ভাইরাল একটি ফ্যান নিয়ে। নিশ্চয়ই অনেকেই এর সাথে পরিচিত হবেন আগে ব্যবহার করে থাকলে।

২. Extonic Air Cooler ফ্যান

দুঃখজনক হলেও সত্য এধরনের বিশ্বব্যাপী তথা বাংলাদেশেও সমানভাবে জনপ্রিয় এই ফ্যানের অরিজিনাল ভার্সন পাওয়া যাচ্ছিল না। বাজারে এর নকলে সয়লাব হয়ে গিয়েছে। অনেকেই এর নকল কিনে ধরা খাচ্ছিলেন। তবে এর অরিজিনাল ভার্সনটা নিয়ে এসেছে Rainbow Gadget Shop। ঢাকার মিরপুরে এদের অফিস।

উপরের মিস্ট (কুয়াশা) মেকার থেকে মিস্ট বের হচ্ছে, আর নিচের ফ্যান থেকে ঠান্ডা বাতাস। আহ! একদম এসির মতো ফিলিংস। Photo Credit: Samzone

এখন অরিজিনালটা চেনার উপায় কি? অরিজিনালে থাকে ব্রাশলেস মটর, নকলে সেটা থাকে না। আবার অরিজিনালটির প্লাস্টিক কোয়ালিটি অনেক ভালো হয়ে থাকে। এবার এই ফ্যানটার সাথে আপনারা নতুন পরিচিত হয়ে থাকলে এর কোয়ালিটি সম্পর্কে কিছু কথা বলি। 

মূলত এই ফ্যানটার ওপরের অংশে রয়েছে মিস্ট বা কুয়াশা মেকার। যেখানে আপনি ট্যাংকে পানি রাখবেন আর মোট পাঁচটা ছোট ছোট মিস্ট মেকার আপনাকে সেগুলো কুয়াশা হিসেবে ফ্যানের বাতাসের সাথে বের করে দিবে (উপরের ছবিতে খেয়াল করলেই বুঝবেন)। সবমিলিয়ে এসির মতো অনুভুতি।

নিচের ফ্যানটাও এডজাস্টেবল। উপরে নিচে সবদিকে ঘুরাতে পারবেন। সবচেয়ে চমৎকার হচ্ছে পানির ট্যাংকের সাথে লাগানো উপরের অংশে মোট পাঁচটি বাটন রয়েছে। এক এক বাটনের ফাংশনও আলাদা আলাদা।

বাটন
Photo Credit: Samzone

প্রথমে ফ্যানের আইকন দেওয়া বাটনটা দিয়ে ফ্যানকে তিন লেভেলে কন্ট্রোল করতে পারবেন। প্রত্যেক লেভেলেই বেশ ভালো রকমের বাতাস পাবেন।

পরের বাটনটা হলো মিস্ট বাটন। এটা একবার প্রেস করলে নিচের একটা ছিদ্র দিয়ে মিস্ট বের হবে। আরেকবার প্রেস করলে তিনটা দিয়ে মিস্ট বের হবে। পরেরবার প্রেসে সবগুলো মিস্টপোর্ট দিয়েই মিস্ট আসবে। উপরে পানির ট্যাংকে ঢাকনা খুলে দুই গ্লাসের মতো পানি এখানে দিতে পারবেন, যা পাঁচ ঘন্টার মতো মিস্ট সাপ্লাই করবে।

পরবর্তী বাটনটি হলো লাইটের বাটন। এটা প্রেস করলে ট্যাংকের পানি বিভিন্ন ধরনের কালারফুল হয়ে যাবে। যা দেখতেও অনেক সুন্দর দেখায়।

এর পরের বাটনটা আরো চমৎকার। এটা একটা অ্যালার্ম বাটন। বাটনটি দিয়ে আপনি যদি চান এক ঘন্টা ফ্যান চলার পর অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাক, তাহলে তা করতে পারবেন। এভাবে ফ্যান কতক্ষন পর্যন্ত চলবে তা বাটনটি প্রেস করে এডজাস্ট করতে পারবেন।

আচ্ছা, এই ফ্যানটি কিভাবে চলে? এবার আসা যাক সেই প্রশ্নের উত্তরে। Extonic Air Cooler ফ্যানটি একটি 10W এর ফ্যান। এটাতে কোন বিল্ট-ইন ব্যাটারি নেয়। তবে এর সাথে পেয়ে যাচ্ছেন একটি USB-C ক্যাবল। এটি দিয়ে ফোন চার্জারে লাগিয়ে মাল্টিপ্লাগের সাথে বা সুইচবোর্ডের প্লাগের সাথে কানেক্ট করে  চালাতে হবে। অথবা কোন পাওয়ারব্যাঙ্কের সাথে কানেক্ট করে চালাতে পারলে তো আরো ভালো।

পাওয়ার ব্যাংকের সাথে কানেক্টেড অবস্থায় চলছে
Photo Credit: Samzone

পাওয়ারব্যাঙ্কের একটা সুবিধা হলো চাইলে সারারাত চালাতে পারবেন যদি এটি বড় হয়। এবার কথা বলা যাক Extonic Air Cooler ফ্যানটির দাম নিয়ে। এই ফ্যানের অরিজিনাল ভার্সনটি নিয়ে এসেছে Rainbow Shop এবং ওরা এর দাম রাখছে ২০৯০ টাকা।

আবার ওরা ফ্যানটার সাথে একটা কম্বো করেছে। সেটা হলো একটা পাওয়ার ব্যাঙ্ক এটার সাথে দিচ্ছে এবং ফ্যানের দাম রাখছে ২৯০০ টাকার মতো।

এবার এমন একটি ফ্যান নিয়ে কথা বলা যাক যেটি পরীক্ষিতভাবে তিন চার বছর সার্ভিস দিয়ে গিয়েছে আমাদের স্টুডিওতে। এবং এখনো চলছে। যদিও ব্যাটারি ব্যাকআপ আগের চেয়ে একটু কম পাওয়া যায় এবং তাই স্বাভাবিক। ফ্যানটার মডেল নেইম হলো Jisulife FA13P।

৩. Jisulife FA13P চার্জার ফ্যান

যতগুলো ফ্যান নিয়ে এখানে কথা বললাম সবার চেয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষিত এই ফ্যানটি। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ স্টুডিওতে ব্যবহার হয়ে আসছে। মডেল তো আপনারা জানেনই। বাংলাদেশ মার্কেটে Jisulife এর ফ্যান বলা যায় খুবই জনপ্রিয়।

Photo Credit: Samzone

এর ফিচারগুলো হলো-
  • টাইমার সেট করা যায়
  • অসিলিয়েশন পেয়ে যাবেন অর্থাৎ ঘুরে ঘুরে বাতাস দিবে
  • তিনটা লেভেলে ফ্যানটাকে কন্ট্রোল করতে পারছেন
  • ব্রাশলেস মটর রয়েছে
  • নয়েজ একদম করে না
  • হাইট এডজাস্টেবল স্ট্যান্ড পেয়ে যাবেন 
এই রিচার্জেবল ফ্যানটার ভিতর রয়েছে 8000mAh এর ব্যাটারি। যেটা চার্জ করতে সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার মতো। চার্জ করতে সময় বেশি লাগলেও 5 থেকে 28 ঘন্টা ব্যাকআপ পাবেন ফ্যানটি থেকে।

যদি এর সবকিছু হাই রাখেন যেমন অসিলিয়েশনও রাখলেন আবার হাই স্পিডে চালালেন তাহলে এর থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো ব্যাকআপ পাবেন। আর লো-স্পিডে চালালে ব্যাকআপ গিয়ে দাঁড়াবে 27 থেকে 28 ঘন্টার মতো। যেটা অনেক বেশি। কারেন্ট গেলেই তো এক দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসে।

যাদের বাজেট একটু বেশি আছে তাদের জন্য রিকমেন্ডেড থাকবে এই ফ্যান। Jisulife FA13P ফ্যানের দাম 3690 টাকা।

আপনারা অনেকেই তো Xiaomi এর এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশে মারাত্মক রকমের একটা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো Xiaomi। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না Xiaomi এর চার্জার ফ্যানও অনেকেই ব্যবহার করে। তাহলে চলুন একটা শাওমি চার্জার ফ্যান নিয়ে কথা বলা যাক।

৪. Xiaomi Solove F5 pro চার্জার ফ্যান

এটাতেও সব একই ধরনের সুবিধা আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন। একে তো ব্রাশলেস মটর, অসিলেশনের সুবিধা আছে, হাইট এডজাস্ট করা যায়, ফ্যানটা সুবিধানুযায়ী উপর নিচ করা যায় ইত্যাদি।

Xiaomi Solove F5 pro 
Photo Credit: Samzone
 

তবে খুব বেশি যে উরাধুরা বাতাস পাবেন তেমন না। অন্তত স্বস্তির জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু পাবেন। তবে লেভেল 3-তে খুব ভালো বাতাস দিতে পারে ফ্যানটি।

ফ্যানটায় রয়েছে 10000 mAh এর বিশাল ব্যাটারি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য সম্পূর্ণ চার্জ করতে ফ্যানটাকে প্রায় ছয় ঘন্টার মতো টাইম লেগে যায়। এবার আসি দামের প্রসঙ্গে।

বাংলাদেশ মার্কেটে Xiaomi Solove F5 pro ফ্যানটির দাম 2290 টাকা।

শেষকথা 

তো এই ছিল এই গরমে চারটি  সেরা চার্জার ফ্যান। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো কমেন্ট বক্সে জানান। আর এর মধ্যে কোন ফ‌্যান ব্যবহার করে থাকলে পারফরম্যান্স কেমন ছিল তা কমেন্টে লিখুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url